বসন্তকাল রচনা | বসন্ত ঋতু রচনা | আমার প্রিয় ঋতু বসন্ত রচনা | Basanta Ritu Rachana | Spring Season Essay in Bengali | Boshonto Reetu Bangla Rochona | Essay on Vasanta Season in Bangla | Boshonto Kal Rochona | Essay on Bosonto in Bengali | Basanta kal Rochona in Bengali
বসন্তকাল রচনা | বসন্ত ঋতু রচনা
ভূমিকা
আমাদের দেশ ঋতু বৈচিত্র্যে সৌন্দর্যময়। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে প্রতি বছর বয়ে যায় প্রকৃতির নতুন নতুন পর্যায়। কখনো প্রখর তাপদাহ, কখনো প্রবল বর্ষন, আবার কখনো তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এভাবেই প্রকৃতি যেন রুপে-রঙে-রসে ঝলমল করে ওঠে, বারবার জেগে ওঠে নতুন আনন্দে। ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও বৈচিত্র্যে বাংলার প্রত্যেকটি ঋতুই আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়। ঋতু কালচক্রের সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। বসন্তকাল তার ফুল ফলের রঙিন ডালি নিয়ে সকলের মনে দোলা দিয়ে যায়। ছয়টি ঋতুর মধ্যে বসন্ত চির রঙীন তাই একে ঋতুরাজ বসন্ত বলা হয়। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর কবিতায় লিখেছেন—
“ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত”।
বসন্তের সময়সীমা
সূর্যের চতুর্দিকে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর বার্ষিক পরিক্রমণ ঋতু পরিবর্তনের সাথে জড়িত বাংলায় প্রধান ঋতু হল— গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। প্রবল শৈত্যের পর আসে শেষ দুই মাস ফাল্গুন ও চৈত্র, এই দুই মাস মিলে হয় বসন্তকাল।
বসন্তে প্রকৃতির রূপ
বসন্তকালের সৌন্দর্য এবং শোভা আমাদের মনকে হরণ করে। বসন্তের নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, প্রাকৃতিক শোভা সকলের প্রানে আনে আনন্দ। পাতাঝরা গাছগুলোতে নতুন পাতা জন্মায়। আমগাছ মুকুলে ভরে যায়। বসন্তের বাতাস দক্ষিণ দিক থেকে বইতে থাকে। বসন্ত যেন নবজীবনের প্রতীক। গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমূল ফুলের মেলা। চারিদিকে কোকিলের কুহু কুহু রব জানান দেয় বসন্ত এসে গেছে। প্রজাপতির আনাগোনা দেখা যায় রঙ-বেরঙের ফুলে। মৌমাছির চাক মধুর টানে গাছে গাছে বাসা বাঁধে। অলির গুঞ্জনে মাতোয়ারা হয় প্রকৃতি। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর “ফাল্গুন” কবিতায় বসন্তকালকে বর্ণনা করেছেন—
“ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল। ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল।
চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়। বেনুবনে মর্মরে দক্ষিণ বায়”।
বসন্ত উৎসব
বসন্তকাল কবি ও সাহিত্যিকের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে যুগ যুগ ধরে। চমৎকার আবহাওয়া এবং ফুল ও ফলের প্রাচুর্যের জন্য এ সময় সাংস্কৃতিক অঙ্গনও মুখরিত হয়ে ওঠে। উদযাপিত হয় বাসন্তী উৎসব, হোলি উৎসব। দোল বা হোলি বসন্তের বড় আপন উৎসব। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব হল মন রাঙানো রঙের উৎসব। সমস্ত জীর্ণতা ভেঙে ফেলার উৎসব তাই এই বসন্ত ঋতু সব অর্থে রঙীন। এই উৎসবে মানুষ ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ, কষ্ট ভুলে মিলেমিশে মেতে ওঠে রঙের আনন্দে।
উপসংহার
বসন্তকাল মানুষের মনে চেতনা আনে। প্রকৃতির হাস্য ও লাস্য মানুষের মনকে প্রভাবিত করে ফেলে। মানুষ এ সময়ে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পায়। এভাবেই প্রতিটি বসন্তে ঋতুরঙ্গ পৃথিবীর রঙ্গশালায় বাংলা হয়ে ওঠে অনন্য। বাঙালী জীবনের সারা বছরের সুখের আকুতি যেন এই ঋতুতেই প্রানবন্ত হয়ে ওঠে। ঋতুরাজ বসন্ত যাবার আগেও দু-হাত ভরে দিয়ে যায় নতুন একটা বছর, বৈশাখীর আনন্দে বাঙালীকে মাতিয়ে বিদায় নেয় ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের বৈচিত্র্যে বিভোর হয়ে কবিগুরু লিখেছেন
“আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়…।”