শীতকাল রচনা | শীত ঋতু রচনা | আমার প্রিয় ঋতু শীত রচনা | Shit Ritu Rachana | Shitkal Essay in Bangla | Winter Season Essay in Bengali | Sit Reetu Bangla Rochona | Essay on Shit Season in Bangla | Sitkal Rochona | Essay on Sheetkal in Bengali | Tomar Prio Ritu Shitkal Rochona
শীতকাল রচনা | শীত ঋতু রচনা
ভূমিকা
ভারতবর্ষ ষড়ঋতুর দেশ। পালাক্রমে ছয়টি ঋতু এসে প্রকৃতিকে নবরুপে সাজিয়ে তোলে। সৌন্দর্যের পরশে সাজিয়ে তারা আসে আর যায়। বসন্ত ঋতুর আগে শীতের আগমন ঘটে। প্রকৃতিকে কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে আবির্ভাব ঘটে শীতকালের। কবি লিখেছেন—
“হিম হিম শীত শীত,
শীত বুড়ি এলো রে।
কনকনে ঠান্ডায়,
দম বুঝি গেলো রে।”
শীতকালের সময়সীমা
ষড়ঋতুর মধ্যে পঞ্চম ঋতু হল শীত, পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস নিয়ে হয় শীতকাল। ইংরাজী বর্ষপঞ্জী অনুসারে নভেম্বর – ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত শীত অনুভূত হয়ে থাকে।
শীতকালের বৈশিষ্ট্য
শীতকাল প্রধানত শুষ্ক এবং দিনের তুলনায় রাত হয় দীর্ঘ। এসময় কুয়াশা ও শিশির পড়ে। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি শীতকাল হলেও বাস্তবে নভেম্বর থেকেই হালকা শীত অনুভূত হয়। উত্তরে হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। ফলে শীতলতা বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারী মাসের গড় তাপমাত্রা দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে ১১° সেলসিয়াস থেকে শুরু করে উপকূলীয় অঞ্চলে ২০°-২১° সেলসিয়াস পর্যন্ত বজায় থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নগন্য এ সময়ে।
শীতের সকাল
কুয়াশার চাদরে মোড়া শীতের সকাল হাড় হিম করা ঠান্ডা নিয়ে শুরু হয়। এ সময়ে এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহুল প্রতীক্ষিত। গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গাতেই একটি ভিন্ন আমেজ তৈরী হয় এই শীতকালে। শীতের সকালে এক অজানা অলসতা ভর করে মানুষের মধ্যে। লেপ মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকাতেই স্বর্গীয় সুখ অনুভূত হয়। গ্রামের মাঠে মাঠে শীতের কুয়াশা ভেদ করে চাষে নয়তো গবাদী পশুদের নিয়ে বের হয় কর্মঠ মানুষেরা। অনেকে খড়কুটো জ্বেলে আগুন পোহায়। খেজুর রস সংগ্রহকারীরা বেরিয়ে পড়ে তাদের কাজে। আবার এই সময়ে পাহাড়ি এলাকাগুলি বরফাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সারারাত তুষারপাতের পর সকালের দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
শীতের উপকারীতা
শীতকালে বিভিন্ন ধরনের সবজীর চাষ হয় যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, সিম, গাজর, মুলো, বেগুন, পালংশাক ইত্যাদি। চাষিরা মাঠ থেকে নতুন ধান কাটে। এসময় নানারকমের ফুলও ফোটে, কমলালেবুর চাষ হয়। শীতকালীন মনোরম আবহাওয়াতে মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যায়। এসময় মানুষের ক্লান্তি কম হয় ফলে অনেক বেশি পরিশ্রমও করতে পারা পারা যায়। পৌষ-পার্বন, বড়দিন, নতুন বছরের উৎসবে মানুষ মেতে ওঠে শীতকালে। ঘরে ঘরে খেজুর গুড়ের পিঠে-পায়েস, বড়দিনের বোক ছোট থেকে বড়ো সবাই ছন্দ করে।
শীতের অসুবিধা
দরিদ্র ও বয়স্ক মানুষদের জন্য শীতকাল খুব একটা সুখদায়ক ঋতু নয়। অনেক বয়স্ক মানুষ শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পারায় অীনহানি ঘটে। দরিদ্র গৃহহীন মানুষের শীতের পোশাক, লেপ, কম্বল প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাবে খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হয়। এসময় মশার উপদ্রব বাড়ে, ডেঙ্গুর মত প্রাণঘাতী অসুখ ও ছড়ায় মারাত্মক ভাবে। শীতের শেষে বসন্ত রোগেরও প্রভাব দেখা যায়।
উপসংহার
বেশিরভাগ মানুষের কাছেই প্রিয় ঋতু হল শীত। শীত আসে আমাদের প্রকৃতিকে বদলে দিতে। নতুন করে প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি হল শীত। শীতের রিক্ততা পুরানো পাতা ঝরিয়ে দিলেই নতুন পাতা নিয়ে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। প্রতিবছর হেমন্তের পালাবদলে উদাসী কুয়াশার চাদর গায়ে শীত আসে বাংলার বুকে। বড়দিন আর নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসবে আর আনন্দেবরণ করা হয় শীতকে।