নেতাজি জয়ন্তীর বক্তৃতা | Netaji Jayanti Speech in Bengali | পরাক্রম দিবসের বক্তৃতা | নেতাজি দিবসের বক্তৃতা | পরাক্রম দিবসের ভাষণ | নেতাজি দিবসের ভাষণ | Parakram Diwas Speech in Bengali | Parakram Divas Speech in Bengali | Netaji Diwas Speech in Bengali | Netaji Divas Speech in Bengali | নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বক্তৃতা | নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভাষণ | নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বক্তব্য | নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বক্তব্য | পরাক্রম দিবসের বক্তব্য | নেতাজি দিবসের বক্তব্য
পরাক্রম দিবসের ভাষণ | নেতাজি জয়ন্তীর বক্তৃতা
সন্মানীয় সভাপতি মহাশয়, শ্রদ্ধেয় প্রধান অতিথি মহাশয়, শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক মহাশয়, শ্রদ্ধেয় বিশিষ্টজন এবং আমার বিদ্যালয়ের সহপাঠী বন্ধুরা সকলের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা, সন্মান, ভালোবাসা ও ২৩ জানুয়ারির শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ নেতাজির শুভ জন্মজয়ন্তীতে কিছু বলার চেষ্টা করছি।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি বীর নেতা। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র, তিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসু নেতাজি নামেই সমধিক পরিচিত।
২০২১ সালে ভারত সরকার তাঁর জন্ম দিনটিকে “পরাক্রম দিবস” হিসাবে ঘোষণা করে। সেই থেকে ২৩শে জানুয়ারি ভারতে “পরাক্রম দিবস” হিসাবে পালিত হচ্ছে। এই মহান দিনে আজকের অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থেকে কিছু কথা বলতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
“মুক্তি পথের হে অগ্রদূত!
পরাধীন দেশের হে রাজদ্রোহী!
তোমাকে শতকোটি প্রণাম!”
স্বাধীনতা আন্দোলনের সাহস, ত্যাগ, বীরত্ব ও দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টিকারী দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারী ওড়িষ্যার কটক শহরে জন্মগ্রহন করেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পিতার নাম জানকিনাথ বসু, মাতার নাম প্রভাবতী দেবী। নেতাজি সুভাষচন্দ্ৰ বসু প্রথম পড়াশুনা শুরু করেন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল স্টুয়ার্ট হাই স্কুলে। সেই স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর ভর্তি হন রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুলে। সেখান থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম হন।
এরপর তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়ন কালে দেশ-বিরোধী বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে কলেজ থেকে বহিস্কার করা হয়। পরে তিনি ভর্তি হন স্কটিশচার্জ কলেজে। এই কলেজ থেকে ১৯১৮ সালে তিনি বিএ পাশ করেন। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান, সেখানে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান দখল করেন এবং নিয়োগপত্র পেয়ে যান।
কিন্তু তিনি ইংরেজ সরকারের অধীনে চাকুরীতে যোগদান না করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে ইংরেজদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য বিপ্লবী চিত্তরঞ্জন দাসের হাত ধরে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। খুব অল্প দিনের মধ্যে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন প্রথম সারির নেতা হয়ে উঠলেন। এবং পর পর দুইবার জাতীয় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।
কিন্তু জাতীর জনক মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত মতানৈক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সুভাষচন্দ্ৰ বসু। এরপর তিনি ফরোয়ার্ড ব্লক নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ইংরেজ সরকার, সরকার-বিরোধী আন্দোলনের জন্য ১৯৪১ সালে তাঁকে বাড়িতে নজর বন্দি করে রাখেন।
সেই সময় তিনি কাবলিওলিয়ার ছদ্ম বেশে প্রথমে জার্মানি ও পরে জাপানে পালিয়ে যান। সেখানে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগদান করেন এবং এই বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হন। আর তখন থেকে তিনি সকলের কাছে নেতাজি হয়ে ওঠেন।
এরপর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বাহিনী নিয়ে মনিপুর দখল করে সেখানে ভারতের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দেন। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়া ও রসদের অভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনী আর এগোতে পারেনি।
ধারণা করা হয় ১৯৪৫ সালের ১৮ই আগষ্ট সায়গন থেকে মাঞ্চুরিয়া যাওয়ার পথে একটি বিমান দুর্ঘটনায় সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু হয়। তবে ওই তথাকথিত দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর খবর অনেকের কাছে রহস্য বলে মনে হয়।
ভারত বর্ষ পেয়েছে স্বাধীনতা, দেশবাসী হয়েছে স্বাধীন। তবুও বাঙালির শ্রেষ্ঠ বীর নেতাজির অভাব বেদনায় কাতর ভারতবাসীর অন্তরে নেতাজির মৃত্যুঞ্জয় উপস্থিতি যুগ হতে যুগান্তরে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। তাই আজ বলতে ইচ্ছে করে—
“তোমার আসন শূন্য আজি,
পূর্ণ করো হে বীর।”