শরৎকাল রচনা | শরৎ ঋতু রচনা | Autumn Season Essay in Bengali

শরৎকাল রচনা | শরৎ ঋতু রচনা | Autumn Season Essay in Bengali

শরৎকাল রচনা | শরতকাল রচনা|শরৎ ঋতু রচনা | আমার প্রিয় ঋতু শরৎ রচনা | Sarat Ritu Rachana | Autumn Season Essay in Bengali | Shorot Reetu Bangla Rochona | Essay on Sharot Season in Bangla | Saratkall Rochona | Essay on Shorotkal in Bengali | Essay on Autumn Season in Bangla | Shorotkal Bangla Rosona | Sarat Ritu Bengali Essay


শরৎকাল রচনা | শরৎ ঋতু রচনা

ভূমিকা

“শরৎ তোমার শিশির-ধোওয়া কুন্তলে
বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে
আজ প্রভাতে হৃদয় ওঠে চঞ্চলি” —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঋতু-রঙ্গমঞ্চে যখন অগ্নিক্ষরা গ্রীষ্মের আতঙ্ক-পান্ডুর বিবর্ণতা মুছে গেছে, যখন বর্ষার বিষণ্ণ বিধুর নিঃসঙ্গতা আর নেই, তখনই নিঃশব্দ চরণ ফেলে আবির্ভাব হয় শরৎ ঋতুর। সবুজ প্রাণে হিল্লোলিত বন প্রকৃতি, শ্বেত শুভ্র কাশফুলের নৃত্যচপল ভঙ্গিমা, দিগন্ত বিস্তৃত ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি খেলা মনে সৃষ্টি করে আনন্দের হিল্লোল। কণ্ঠে জাগে গান—

“শরতে আজ কোন অতিথি এল প্রাণের দ্বারে,
আনন্দগান গা রে হৃদয়, আনন্দ গান রে।”

শরতের পর্যায়কাল

ঋতুচক্রের তৃতীয় ঋতু শরৎ, ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস নিয়ে শরৎকাল। ইংরাজী মাসের আগস্টের মধ্যভাগ থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়কালকে শরৎ ঋতু বলে চিহ্নিত করা হয়। এই সময় অর্থাৎ ভাদ্র মাসে তাপমাত্রা বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পায় সাথে আর্দ্রতাও সর্বোচ্চে পৌঁছায় কিন্তু আশ্বিন মাসের আবহাওয়া অত্যন্ত মনোরম। এক কথায় ভাদ্রে তাঁর আগমন, আশ্বিনে তার ঐশ্বর্যের প্রকাশ আর কার্তিকের সূচনায় তার অন্তর্ধান।

শরতের বৈশিষ্ঠ্য

শরৎ যে নিয়তই খুশিতে ভরপুর। হালকা চপল ছন্দ তার। মেঘ ও রৌদ্রের লুকোচুরি খেলতে খেলতে শরৎ আসে। একটু মেঘ এক পশলা বৃষ্টি, এক ঝলক হাওয়া, পরক্ষনেই সোনালী রোদ্দুর। গাছের পাতায় রোদের ঝিকিমিকি, আকাশে পেজা তুলোর মতো টুকরো মেঘের ভেলা, আবার হয়তো খন্ড মেঘে ছেয়ে গেল আকাশ। এমনিভাবেই মেঘ আর রোদের খেলায় মেতে ওঠে শরৎ সাথে পূজোর গন্ধে শরতের আকাশে বাতাসে মানুষের মনে এনে দেয় খুশির জোয়ার। মন গেয়ে ওঠে—

READ MORE  বাল্যবিবাহ রচনা | Child Marriage Essay in Bengali

“এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে।
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ-রথে।।”

শরতের সৌন্দর্য

বর্ষার অবসানে শরৎ বাংলার বুকে এনে দেয় আনন্দের মাধুরী। সবুজ প্রাণে হিল্লোলিত বন প্রকৃতি, শ্বেত শুভ্র কাশফুলের নৃত্যচপল ভটিমা, দিগন্ত বিস্তৃত ধানের ক্ষেতে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি খেলা মনের মধ্যে সৃষ্টি করে আনন্দের হিল্লোল। শারদীয় মৃদু-মন্দ হাওয়া, ফোটা ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ, নীলিমার দিগন্ত বিস্তৃত পরিবেশ মানব মনকে উদাস করে তোলে। রাতের ফোটা শিউলি ঝরে পড়ে প্রভাতের পদধ্বনিতে। খেতের ফসল আমন্ত্রন জানায়, জানান দিয়ে যায় শরতের বার্তা। শরতের আগমনে বাংলার বন-উপবন, দোয়েল, কোয়েল, ময়নার কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে। শরৎ সকালে প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে পড়া সূর্যের আলোকরশ্মি শিশির ভেজা ঘাসে ও পাতায় পাতায় যেন এক ভিন্ন মাধুর্যের সৃষ্টি করে। নীল আকাশের বুকে থোকা থোকা মেঘ ঘুরে বেড়ায় যেন নীল আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা। রবি ঠাকুরের সুরে সুর মিলিয়ে আমাদের মন গেয়ে উঠতে চায়—

“নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই লুকোচুরি খেলা”।

শরতের উৎসব

শরৎকাল এর মূল আকর্ষন হিন্দু সম্প্রদায়ের দূর্গোৎসব বা দূর্গাপূজা। যা হিন্দু বাঙালীর প্রধান উৎসব। দূর্গাপূজা শরৎ ঋতুতে হয় তাই দূর্গাপূজাকে শারদীয় উৎসব বলা হয়। মা দূর্গার আগমনের জন্য হিন্দু বাঙালী অপেক্ষা করে থাকে সারা বছর ধরে। সেই অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে শরৎ কালে মা দূর্গা নিয়ে আসেন আনন্দ বাংলার ঘুরে ঘরে। আকাশ বাতাস মুখরিত হয় মায়ের আগমনে ঢাকের বাদ্যিতে উৎসবের আনন্দে হিন্দু বাঙালী হয় মাতোয়ারা। দূর্গাপূজা ছাড়াও লক্ষ্মীপূজা ও কালীপূজাও এই শরৎকালেই উদযাপিত হয়ে থাকে।

শরতের উপহার

শরৎকালে বনে-উপবনে শিউলি, গোলাপ, বকুল মল্লিকা, কামিনী, মাধবী প্রভৃতি ফুল ফোটে। বিলে ঝিলে ফোটে পদ্ম, শাপলা আর নদীর ধারে ফোটে কাশফুল। এ সময় গাছে গাছে তাল পাকে। শরৎ মানে কৃষকের আশা নতুন ফসলের। বর্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে বোনা বীজ শরতে পায় প্রাণ। হেমন্তে যে ধান ঘরে উঠবে সে ধানের শিষগুলো চকচক করে ওঠে শরতে আর উজ্জ্বল হয় কৃষকের চোখ। এসময় কৃষকদের বিশ্রামের সময়। সাধারণ মানুষেরও সারা বছর কাজের পর শারদীয়া ছুটি উপলক্ষ্যে মন আর ঘরে বন্দি থাকতে চায় না। অনেকেই ছুটি কাটাতে বেড়িয়ে পড়ে ভ্রমণে। শরৎ তাই ছুটির ঋতু, অবকাশের ঋতু।

READ MORE  মিড-ডে মিল প্রকল্প রচনা | Mid-Day Meal Prakalpa Essay in Bengali

উপসংহার

রূপসী বাংলার ষড়ঋতু নানা রুপের বিচিত্র সমারোহে নিত্য আবর্তিত হয়ে চলে। বাংলা ধাতুচক্রের ধারায় বসন্ত যদি ঋতুরাজ হয়, শরৎ তবে ঋতুর রানী। শরতের আকাশের সাদা মেঘের ভেলা আর নদীর তীরে সাদা কাশফুল, ভোরে শিশির ভেজা শিউলি আর দূর্গা মায়ের আগমন সব মিলিয়ে শরৎ যেন শুভ্রতার ঋতু। রাতের শরতের জ্যোৎস্নার মোহিত রুপ যেন ভূবন ভোলানো এক দৃশ্য। তাই বলা যায় শরৎ বাংলার ঋতুর রানী। শরতের প্রভাব বাঙালী জীবনে প্রকৃতির এক অনুপম আশীর্বাদ। রুদ্ধশ্বাস জীবনে মুক্তির খোলা বাতায়ন। তাই কবি লিখেছেন—

“শরৎ রানীর বানী বাজে কমল দলে,
ললিত রাগের সুর করে তাই শিউলিতলে।”

Leave a Comment

error: Content is protected !!
Scroll to Top