বাল্যবিবাহ রচনা | বাল্যবিবাহ বাংলা রচনা | Child Marriage Essay in Bengali | Ballo Biba Rochona | Bailo Bibah List Rachona | Bal Vivah Essay in Bangla | Child Marriage Essay in Bangla
বাল্যবিবাহ রচনা
ভূমিকা
বিশ্বের যেসব দেশে বাল্যবিবাহের হার উচ্চ, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম। বাল্যবিবাহের পেছনে বেশ কিছু সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিষয় এবং ঐতিহ্য কাজ করে। বাংলাদেশে যেসব কারণ বাল্যবিবাহের ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, মেয়েদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে ভয় এবং সামাজিক রীতিনীতি ও বিশ্বাসের জটিল সংকট। সাম্প্রতিককালে কোভিড-১৯ এর কারণে বাল্যবিবাহ মহামারির রূপ ধারণ করেছে।
বাল্যবিবাহ
“বাল্যবিবাহ” বলতে এমন বিবাহ বোঝায় যার কোনো এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক। “অপ্রাপ্ত বয়স্ক” অর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ বছর পূর্ণ হয়নি এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি এমন কোনো নারী। বাল্যবিবাহে মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের ওপরই প্রভাব পড়ে৷ তবে মেয়েরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ শিশু বয়সে বিয়ে করতে বাধ্য হওয়া একটি মেয়ে তাৎক্ষণিক এবং জীবনভর এর পরিণাম ভোগ করে। তার স্কুল জীবন শেষ করার পূর্বেই স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত এবং গর্ভধারণের সময় জটিলতায় ভোগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বাল্যবিবাহের ইতিহাস
ঐতিহাসিকভাবে, বিশ্বব্যাপী বাল্যবিবাহ একটি প্রচলিত প্রথা। প্রাচীন গ্রিসে মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে এবং মাতৃত্বে উৎসাহিত করা হতো। এমনকি ছেলেদেরও কৈশোরেই বিয়ের জন্য উৎসাহ দেওয়া হতো। বাল্যবিবাহ ও কৈশোরে গর্ভধারণ খুবই সাধারণ ঘটনা ছিল। প্রাচীন রোমে মেয়েদের বিয়ের বয়স ছিল ১২ বছর এবং ছেলেদের ১৪ বছর। মধ্যযুগে ব্রিটিশ আইন অনুসারে ১৬ বছরের পূর্বে বিয়ে সর্বজন স্বীকৃত ছিল। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সমাজে মেয়েদের সাধারণত বয়ঃসন্ধির আগেই বিয়ে দেওয়া হতো।
বাল্যবিবাহের কারণ
যে সকল কারণ বাল্যবিবাহের জন্য দায়ী তার মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, লিঙ্গ বৈষম্য, প্রচলিত প্রথা বা চর্চা, নিরক্ষরতা, মেয়েদের উপার্জনে অক্ষম ভাবা এবং নিরাপত্তাহীনতা, বিশেষত যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ বা মহামারির সময়।
বাল্যবিবাহের কুফল
বাল্যবিবাহ মেয়েদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ। অল্প বয়সে বেশিরভাগ মাতৃ মৃত্যুর প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। ১৫-১৯ বছর বয়সি গর্ভবতী নারীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ২০ বছর বয়সি গর্ভবতী নারীদের তুলনায় দ্বিগুণ। আর ১৫ বছরের কম বয়সি গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৫-৭ গুণ বেশি। কৈশোরকালে গর্ভধারণের ফলে মেয়েরা অপুষ্টিতে ভোগে এবং বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। বাল্যবিবাহ শুধু মায়ের স্বাস্থ্যই না বরং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ। ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের অপরিণত সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা ৩৫-৫৫%। তাছাড়াও যখন মায়ের বয়স ১৮ বছরের নিচে তখন শিশুমৃত্যুর হার ৬০%। যেসব নারী কম বয়সে শিশুর জন্ম দেয় ঐসব শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় ও শিশু অপুষ্টিতে ভোগে।
বাল্যবিবাহ রোধে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ
দেশের প্রায় ৫১ শতাংশ কন্যাসন্তান বাল্যবিবাহের শিকার। ইতোমধ্যে সরকার দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করেছে। তারপরও বাল্যবিবাহের পরিমাণ আশাতীত হ্রাস করা সম্ভব হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবার বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখে। কিন্তু এ জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটায় বা জ্ঞানটি সম্পর্কে মূল্যায়ন করে এমন পরিবারের সংখ্যা এখনো আশাপ্রদ নয়। সরকারিভাবে বাল্যবিবাহ বন্ধে অভিভাবকদের আহবান এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়নসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পরামর্শ অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ রোধে প্রধান উপায় হলো নারীদের শিক্ষা অর্জন। বিবাহের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত আইন কার্যকর এবং অভিভাবকদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত করা। বাল্যবিবাহ রোধে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহের সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি সম্পর্কে অভিভাবকদের অবহিত করা, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, নারী শিক্ষা সমর্থন এবং নারীদের ও তাদের পরিবারকে অর্থনৈতিক সাহায্য করা।