করোনা ভাইরাস রচনা | কোভিড- ১৯ রচনা | নোভেল করোনা ভাইরাস রচনা | করোনা ভাইরাস বাংলা রচনা | Corona Virus Essay in Bengali | Covid 19 Essay in Bangla | Coronavirus Rochona | Covid 19 Rachona | Bangla Essay on Novel Corona Virus
করোনা ভাইরাস রচনা
ভূমিকা
বিশ্বজুড়ে এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস বলতে এক গোত্রের অনেকগুলো ভাইরাসকে বোঝায়, যা মূলত প্রাণীদের মধ্যে পাওয়া যায়৷ করোনা ভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষার শব্দ করোনা থেকে নেওয়া হয়েছে, যেটি মুলত গ্রিক শব্দ, যার অর্থ হল মুকুট।
নামকরণ
করোনা ভাইরাস নামটি এসেছে এর আকৃতির ওপর ভিত্তি করে৷ ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাসটি ক্রাউন বা মুকুটের মতো দেখতে হওয়ায় এর নাম হয়েছে করোনা।
করোনা ভাইরাস আবিষ্কার
১৯৩০ সালে প্রথমদিকে সর্বপ্রথম মুরগির মধ্যে সংক্রামক ব্রঙ্কাইটিস রোগের কারণ হিসেবে এই ভাইরাস আবিষ্কার হয়৷ কিন্তু ১৯৬০ সালে মানুষকে আক্রান্ত করা সর্বপ্রথম করোনা ভাইরাসের খোঁজ মেলে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা প্রায় ছয়টি করোনা ভাইরাস সনাক্ত করেছেন, যা মানুষকে প্রভাবিত করে। করোনা ভাইরাসের মধ্যে সবচেয়ে নতুন সংস্করণ হল “নোভেল করোনা ভাইরাস” যা কোভিড- ১৯ নামে পরিচিত।
কোভিড-১৯ এর আকৃতি
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় মহামারীর নাম কোভিড ১৯ ভাইরাস। এই ভাইরাসটি করোনা পরিবারের অর্ন্তভুক্ত সেজন্য এই ভাইরাসটির গঠন দেখতে মুকুটের মতো। এই ভাইরাসটির আকার ৫০-২০০ ন্যানো মিটার।
কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি
কোভিড-১৯ এর ভাইরাস কীভাবে এবং প্রথম কোথায় ছড়িয়েছিল তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে চিকিসা বিজ্ঞানীদের অনুমান ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চিনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের একটি প্রজাতির সংক্রমণ দেখা দেয়। এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে এক মাসে মধ্যেই রোগীর সংখ্যা মারাত্মক আকারে বাড়তে থাকে। পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায় বেশীর ভাগ রোগী উহান শহরের এবং তারা দক্ষিণ সমুদ্রের খাবারের পাইকারী বাজারের সঙ্গে জড়িত। যেখানে মুলত সামুদ্রিক প্রাণী বিক্রি করা হয়। সন্দেহ করা হচ্ছে এইসব প্রাণী থেকে কোভিড-১৯ মানব দেহে প্রবেশ করে৷ তবে অন্য এক দল বিজ্ঞানীর ধারণা অন্য কোনো প্রানী যেমন- বাদুর থেকে এই ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করে।
কোভিড-১৯ এর লক্ষণ সমূহ
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রামিত ব্যক্তির দেহে রোগের লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায় না। সাধারণত দুই দিন থেকে চৌদ্দ দিনের ভিতরে সংক্রামিত ব্যক্তির লক্ষণ প্রকাশ পায়৷ এই ভাইরাসের লক্ষণ গুলো হল—
(ক) সর্দি-কাশি।
(খ) গলা ব্যথা।
(গ) জ্বর।
(ঘ) হাঁচি।
(ঙ) অবসাদ।
(চ) শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাব
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারি। প্রত্যক্ষ প্রভাবরূপে আমরা প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এই আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে বহু মানুষ প্রতিদিন তাদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে। অন্যদিকে লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে বহু দেশ পিছিয়ে পড়েছে। যার ফলস্বরূপ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে।
কোভিড-১৯ এর প্রতিকার
করোনা ভাইরাসে প্রতিকার করার প্রধান হাতিয়ার হল ভ্যাকসিন। তাছাড়া ভ্যাকসিনের পাশাপাশি বেশ কিছু বিধি-নিষেধ মানতে হবে। যেমন—
(ক) হাঁচি বা কাশির পরে হাত ধরে নিতে হবে।
(খ) হাঁচি বা কাশির আগে মুখ ঢেকে নিতে হবে।
(গ) মাক্স পরিধান করতে হবে।
(ঘ) ভিড় থেকে দূরে থাকতে হবে।
(ঙ) সরকার প্রদত্ত সমস্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে।
টিকাকরণ বা ভ্যাকসিনেশন
সমগ্র বিশ্বব্যাপী দীর্ঘ গবেষণার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিকা আবিষ্কার করে তার ট্রায়াল শুরু করে। এর পর আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করে দেয়। ভারত ভ্যাকসিন আবিষ্কারে পিছিয়ে থাকেনি। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ভারত দুটি ভ্যাকসিন কোভিশিন্ড ও কো-ভ্যাকসিন নিয়ে আসে যা সফলভাবে ট্রায়ালের পর ধাপে ধাপে জনমানসে টিকাকরণ শুরু করে দেয়।
উপসংহার
কথায় বলে, সভ্যতা যখন নিজের গতিকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করে, সৃষ্টি তখন সমগ্র সভ্যতাকে ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধ করে দেয়। একটি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাস যেন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই প্রবাদ বাক্যের সত্যতাই প্রমাণ করে দিল। আবারও আমরা দেখতে পেলাম সৃষ্টির কাছে আমরা কতখানি অসহায়। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে সৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে চলাই প্রকৃত সার্থকতা।