প্রজাতন্ত্র দিবসের রচনা বাংলা | গণতন্ত্র দিবসের রচনা বাংলা | গণরাজ্য দিবসের রচনা বাংলা | সাধারণতন্ত্র দিবসের রচনা বাংলা | Republic Day Essay in Bengali | ২৬শে জানুযারি দিবসের রচনা বাংলা | ২৬ জানুযারি দিবসের রচনা বাংলা | Ganatantra Divas Essay in Bengali | Ganatantra Diwas Essay in Bengali | Ganarajya Divas Essay in Bengali | Ganarajya Diwas Essay in Bengali | Prajatantra Diwas Rosona | Prajatantra Diwas Essay in Bengla | Prajatantra Divas Essay in Bangla
প্রজাতন্ত্র দিবস রচনা
ভূমিকা
বৃহত্তম গনতন্ত্র হিসাবে ভারতবর্ষের জন্ম হয়েছিল ২৬শে জানুযারী, ১৯৫০ সালে। তাই স্বাধীনতা দিবসের মতই এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম, এই দিনটিকে আমরা গনতন্ত্র দিবস বা সাধারণতন্ত্র দিবস বা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করি। সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে ২৬শে জানুযারি মহাসমারোহে প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয়। এই দিনটি ভারতের তিনটি জাতীয় দিবসের অন্যতম একটি। তাই “প্রজাতন্ত্র দিবস”কে জাতীয় ছুটি হিসাবে ঘোষনা করা হয়েছে।
প্রজাতন্ত্র কি?
বর্তমানে পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশেই একটি নির্দিষ্ট শাসনতন্ত্র অনুযায়ী দেশ শাসন করা হয়। প্রতিটি স্বাধীন দেশের নির্ধারিত এই শাসনতন্ত্রের মূল লক্ষ্য হল দেশের শান্তি – শৃঙ্গলা রক্ষা করা। দেশবাসীদের সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধন করা ও কল্যাণ কামী কাজ করা। প্রজাদের উন্নতি কল্পে রচিত এই শাসনতন্ত্র প্রজাতন্ত্র নামে খ্যাত। প্রকৃত পক্ষে পৃথিবীর ইতিহাসে রাজ্য বা দেশের শাসন পদ্ধতি বা ব্যবস্থার বিবর্তনে আধুনিকতম হল গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো। এই গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার শীর্ষে যিনি অধিষ্ঠান করেন আমাদের দেশে তার স্থান বংশ ক্রমে নির্ধারিত হয় না বরং তিনি এই দেশের জনগণের মতানুসারে পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। গনতন্ত্রের শীর্ষস্থানীয় অধিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে জনগণের এই বিশেষ ভূমিকাকে বলা হয় প্রজাতন্ত্র।
প্রজাতন্ত্র দিবসের ইতিহাস
১৯৪৬ সালে যখন ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বাধীনতা দানের কথা ঘোষনা করে তখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রথমে একটি অস্থায়ী কেন্দ্রীয় সরকার এবং ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারতবর্ষের একটি সংবিধান তৈরীর উদ্দেশ্যে সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটি গনপরিষদ গঠিত হয়। এই গনপরিষদের সভাপতিত্ব করেছিলেন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, এবং সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতিত্ব করেন ডঃ বি.আর. আম্বেদকর। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ সংবিধান রচনার কাজ শেষ হয় ২৬ শে ডিসেম্বরে। এটি ভারতীয় সংসদে সর্বসম্মতি- ক্রমে গৃহীত হয়। তার ঠিক এক মাস পরে ২৬শে জানুয়ারীর দিনটিতে সমগ্র দেশে সংবিধান কার্যকরী হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবসের ঐতিহ্য পালন
স্বাধীন ভারতবর্ষে জানুয়ারী মাসের ২৬ তারিখে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের একটি বিশেষ ঐতিহ্য প্রচলিত রয়েছে। এই দিনে দিল্লির রাজপথে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে একটি জাঁকজমকপূর্ণ মহড়ার আয়োজন করা হয়। সেই মহড়াতে ভারতীয় স্থল সেনা, জল সেনা, বায়ু সেনা এবং আধাসামরিক বাহিনীর সেনা বল অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন রাষ্ট্রের কর্ণধার, দেশের সর্বাধিনায়ক ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রীপরিষদ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়া প্রতিবছরই বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকেন বিশ্বের কোন একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি।
এছাড়া প্রতিটি স্কুল, কলেজ, ক্লাব সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই দিনটিতে পতাকা উত্তোলন করার সাথে সাথে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়, কোথাও আবার প্রজাতন্ত্র দিবসের ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে শোভাযাত্রাও বের হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের এমন উদযাপনের মাধ্যমে দিনটি রাজনৈতিক উর্ধে উঠে একটি সামাজিক মেলবন্ধনের উৎসবে পরিণত হয়।
প্রজাতন্ত্র দিবশের গুরুত্ব
প্রজাতন্ত্র দিবসের উৎসব আমাদের গর্বকে পূর্ণ করে। রাজধানীতে কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান ভারতকে সমগ্র বিশ্বের দরবারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিপুল ক্ষমতার নিদর্শনকেই তুলে ধরে। প্রতিটি ভারতবাসীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সুখ দেয়। প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিক স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেকোনো নিপীড়নের বিরুদ্ধে আওমাজ তুলতে পারি এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের দেশের সবিধান ও প্রজাতন্ত্রীয় প্রকৃতির কারণে। প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় দীর্ঘ লড়াই এর মধ্য দিয়ে এই দিনটি আমরা অজন করেছি। পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ, যন্ত্রণা, সবকিছু জড়িয়ে আছে এর সাথে। তাই এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
উপসংহার
প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের দেশের তিনটি জাতীয় উৎসবের মধ্যে একটি, এটি সেই দিন যা আমাদের প্রজাতন্ত্রের গুরুত্ব অনুধাবন করে। এই কারনেই সারা দেশে এটি এত উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। এর সাথে, এই দিনটিও যখন ভারত তার কৌশলগত শক্তি প্রদর্শন করে, সেটি কাউকে আতঙ্কিত করার জনা নয়। বরং একটি বার্তা দেয় যে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম। ২৬ জানুয়ারী এই দিনটি আমাদের দেশের জনা একটি ঐতিহাসিক পূর্ণ উৎসাহ এবং শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করা হয়।