প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাষণ | গণতন্ত্র দিবসের ভাষণ | গণরাজ্য দিবসের ভাষণ | Republic Day Speech in Bengali | Ganatantra Divas Speech in Bengali | Ganatantra Diwas Speech in Bangla | Ganarajya Divas Speech in Bengali | Ganarajya Diwas Speech in Bengali | 26 January Speech in Bengali | Republic Day Bangla Bhashan | Republic Day Bengali Basan
প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাষণ
সন্মানীয় সভাপতি মহোদয়, উপস্থিত সম্মানীয় অতিথি, শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষক এবং আমার প্রিয় সহপাঠীবৃন্দ আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আজ আমরা সকলে ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করার জন্য উপস্থিত হয়েছি। প্রথমেই আপনাদের সকলকে জানাই প্রজাতন্ত্র দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ নাম হল সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র ভারত। প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি তারিখে ভারতে সাধারণতন্ত্র দিবস কিংবা প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয়। এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট দীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের ফলে ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পায়। বহু বীর সৈনিকের রক্তে রাঙা ভারতবর্ষের এই স্বাধীনতা ১৫ই আগষ্ট ভারত স্বাধীন হলেও দেশে তখনও কোনো স্থায়ী সংবিধান ছিল না। কিন্তু সেই সময় দেশ পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন জরুরী হয়ে পড়ে। এই কথা মাথায় রেখে ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি ড.বি.আর. আম্বেদকর রচিত দেশের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল। তাই ২৬ শে জানুয়ারি অই দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এই প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের ইতিহাসের ও বর্তমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ কেন প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয়, এর গুরুত্ব কী তা আমাদের সকলেরই জানা উচিত। তাহলে এবার আমরা প্রজাতন্ত্র দিবস সম্পর্কে বিশেষ কয়েকটি তথ্য জনব।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট ভারত স্বাধীন হলেও দেশের প্রধান হিসেবে তখনও বহাল ছিলেন ষষ্ঠ জর্জ এবং লেড লুই মাউন্টব্যাটেন ছিলেন অর গভর্নর জেনারেল। সেইসময় আমাদের দেশকে ভারত সরকার আইন দ্বারা পরিচালনা করা হতো। ১৯৪৭ সালের ২৮শে আগষ্ট একটি স্থায়ী সংবিধান রচনার জন্য ড্রাফটিং কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড.বি.আর আম্বেদকর। ৪ঠা নভেম্বর ১৯৪৭ সালে কমিটি একটি খসড়া সংবিধান প্রস্তুত করে গণপরিষদে জমা দেয়। চূড়ান্তভাবে সংবিধান গৃহীত হওয়ার আগে ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন ব্যাপী সময়ে গণপরিষদ এই খসড়া সংবিধান আলোচনার জন্য ১৬৬ বার অধিবেশনে ডাকে। এই অধিবেশনে জনসাধারণের প্রবেশের অধিকার ছিল।
১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর স্বাধীন ভারতের সংবিধান গৃহীত হবার পর ঠিক করা হয় ১৯৩০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালনের সেই দিনটিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি থেকে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হবে এবং সেদিন থেকে প্রজাতান্ত্রিক ভারতবর্ষ বা Republic of India হিসেবে পরিচিত হবে।
বহু বিতর্ক ও কিছু সংশোধনের পর ২৪ শে জানুয়ারি ১৯৫০ সালে গণপরিষদের ৩০৮ জন সদস্য চূড়ান্ত সংবিধানের হাতে লেখা দুটি নথিতে স্বাক্ষর করেন, একটি ইংরেজি ও অপরটি হিন্দি। এর দুদিন পর ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০ সালে সকাল ১০ টা ১৮ মিনিটে দেশব্যাপী এই সংবিধান কার্যকর হয়। দেশকে একটি সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ এবং গণতান্ত্রিক জাতি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। বিশ্বের দীর্ঘতম হওয়ার কারণে ভারতীয় সংবিধান প্রণয়ন করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছিল। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী বর্ণ, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ ইত্যাদি নির্বিশেষে তার সমস্ত নাগরিকের জন্য সম অধিকারের উল্লেখ রয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী যেমন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তেমনই প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন রাষ্ট্রপতির হাত দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে রাষ্ট্রপতি সাহসিকতার জন্য পুরস্কার প্রদান করে থাকেন। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও নাগরিকদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান তিন দিন ধরে চলে।
এই হলো ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে কিছু বিশেষ কথা। আমরা যদি সংবিধানের কথা মেনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সার্বভৌমত্ব, ভাতৃত্ববোধ, ন্যায় জাগিয়ে তুলতে পারি তবেই ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের সার্থকতা পাবে। জয় হিন্দ।। জয় ভারত।।