নেতাজী সুভাষ চন্দ্ৰ বসু – বাংলা রচনা | নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর বিষয়ে রচনা | Subhas Chandra Bose Essay in Bengali | নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বাংলা রচনা | সুভাষ চন্দ্র বসু রচনা | Subhas Chandra Bose Essay | Netaji Subhas Chandra Bose Bangla Rosona | Subhas Chandra Bose Bengali Rasona | সুভাষচন্দ্র বসু বাংলা রচনা
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু রচনা
ভূমিকা
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতের স্বদেশী আন্দোলনের বিভিন্ন ধাপে এসেছেন বহু দেশনেতা। এনাদের মধ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ভারতবর্ষের রাজনৈতিক মঞ্চের এক অন্যতম বিরল ব্যাক্তিত্ব। এনার জন্ম হয় উচ্চবিত্ত পরিবারে, এরপর বিলেতে গিয়ে আই.এ.এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এনার সম্মুখে ছিল খ্যাতি ও স্বচ্ছল জীবনের হাতছানি।
তবুও এসবকিছুকে ত্যাগ করে তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য অনিশ্চিত দুর্গম পথে পা বাড়িয়েছিলেন। স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য ডাক দিয়েছিলেন দেশবাসীদের। “আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো” এমন আত্মপ্রত্যয়ী উদাত্ত আহ্বান শুধুমাত্র নেতাজির পক্ষেই সম্ভব।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন ওড়িশার/ উড়িষ্যার কটক শহরে। পিতা জানকীনাথ বসু ও মাতা প্রভাবতী দেবী। পিতা জানকীনাথ বসু ছিলেন কটকের একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী।
কটক শহরেই নেতাজির পাঠ্য জীবনের সূচনা হয়। শৈশবেই তাঁর মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। কটকের রেভেনসো কলিজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন।
কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে শুরু হয় তাঁর কলেজীয় শিক্ষা। উক্ত কলেজের অধ্যাপক ওটেন ছিলেন একজন ভারত বিদ্বেষী। অধ্যাপকের অশালীন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। একারণে তাঁকে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল।
এরপর আশুভোষ মুখোপাধ্যায় এর চেষ্টায় স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে। পরবর্তীতে আই.সি.এস পরীক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। ১৯১৯ সালে তিনি আই.সি.এস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। এরপর দেশে ফিরে প্রত্যাখ্যান করতে থাকলেন একের পর এক বড়ো বড়ো সরকারি চাকরির প্রলোভন। এবং স্থির করলেন তাঁর একমাত্র কাজ দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই।
রাজনৈতিক কর্মজীবন
ভারত প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় নেতাজির রাজনৈতিক জীবন ও দেশসেবার মহান ব্রত। নেতাজির তারুণ্য, কর্মশক্তি, সংগঠনী ক্ষমতা,বক্তিতা দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা, অগাধ পাণ্ডিত্য, নেতৃত্ব দেওয়ার বিস্ময়কর দক্ষতা সকলকে অভিভূত করে।
এই সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ছিলেন বাংলাদেশের এক অবিসংবাদী নেভা। এনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে শুরু হয় নেতাজির স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নতুন অধ্যায়। তিনি গড়ে তোলেন এক শক্তিশালী সেচ্ছাসেবক বাহিনী। কলকাতা করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচিত হন।
১৯২১ সালে সূচনা হয় গান্ধীজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন। সুভাষচন্দ্র বসুর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বদানের বিস্ময়কর দক্ষতা দেখে ইংরেজ সরকার ভয় পেয়ে তাঁকে নিক্ষেপ করেন কারান্তরালে। একবার দুবার নয়, জীবনে বহুবার তিনি বরণ করে নেন কারাজীবনকে।
১৯২২ সালে উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নিঃস্বার্থ ভাবে আর্তদের সেবা করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছিলেন স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতার সমর্থক। নেতাজি ছিলেন এই একই মত ও পথের পথিক।
চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ্য দল গঠনের নৈপথ্যে তিনিই ছিলেন প্রধান সেনাপতি। অভিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য ১৯২৭ সালে ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হন তিনি। তাই কিছু সময় ভিনেয়ায় স্বাস্থ্য নিবাসে কাটাতে হয়। এরপর দেশে ফিরে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে গান্ধীজির সাথে মতবিরোধ হয় নেভাজির তাই তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে এক রাজনৈতিক দল গঠন করেন। সুভাষচন্দ্রের মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলন ও মহাজাতি সদন প্রতিষ্ঠা এক অন্যতম স্মরণীয় কীর্তি।
ভারত ত্যাগ
তখন চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সে সময় নেতাজি কারারুদ্ধ ছিলেন, উক্ত সময়ে তাঁর ভগ্ন স্বাস্থ্যের জন্য তাঁকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হলেও তাঁর নিজের বাড়িতে তাঁকে অন্তরীণ রাখা হয়েছিল। ১৯৪১ সালে ইংরেজ সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে কাবুলির ছদ্মবেশ ধারণ করে নেতাজি ভারত ছাড়েন।
ইতালি ও জার্মান হয়ে গিয়ে পৌঁছান জাপানে। জাপান প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সক্রিয় সমর্থনে প্রবাসী ভারতীয় ও জাপানবন্দি ভারতীয় দের নিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু গড়ে তুললেন “আজাদ হিন্দ বাহিনী” ও আজাদ হিন্দ সরকার।
ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেয় আজাদ হিন্দ বাহিনী। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতা, ও পরাভূত জাপানের আত্মসমর্পণ এর ফলে সব কিছু ব্যার্থ হয়। আজাদ হিন্দ বাহিনী ব্রিটিশ শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
উপসংহার
পরবর্তী ইতিহাস অত্যন্ত দুঃখের। জাপানের বুকে পড়লো পারমাণবিক বোমা। জাপান আত্মসমর্পণ করলো। পরাজয় এসে ছিনিয়ে নিল বীর নেতাজির স্বপ্ন। জাপানের বিমানে তিনি ভাইহেকু রওনা হলেন। তার পর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি এই মহান নেতার।
সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজ কোথায়? আজ পর্যন্ত এর যথার্থ জবাব মেলেনি। সম্ভবত তাইহেকুর বিমান দুর্ঘটনার কারণে তাঁর জীবনাবসান ঘটেছিল। কিন্তু সমস্ত ভারতবাসীর হৃদয়ে নেতাজি আজও অমর। নেতাজির অভাব বেদনাতে কাতর ভারতবাসীর অন্তর সর্বক্ষণ বলে ওঠে—
“তোমার আসন শূন্য আজি,
পূর্ণ করো হে বীর।”